মক্কা ও মদিনার তত্ত্বাবধায়ন : সৌদি আরবের চিরায়ত অধিকার

Published : Tuesday, 13 March, 2018 at 8:44 PM
ইসলাম বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত ক্রমবর্ধমান এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০৬ কোটি মানুষ মুসলিম। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান অঞ্চলে মুসলমানদের বসবাস সবচেয়ে বেশী। এই বিপুল সংখ্যক মুসলিম ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র দুটি শহর মক্কা ও মদিনার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই দুটি শহরই সৌদি আরবে অবস্থিত। মক্কায় রয়েছে আল্লাহর ঘর বলে পরিচিত পবিত্র কাবা শরীফ আর মদিনায় রয়েছে পবিত্র মসজিদ-এ-নববী, যার মাঝে আমাদের সকলের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর মাজার অবস্থিত।
সারা পৃথিবীতে মক্কার মতো আর কোন শহর নেই যা বিশ্বের এতো বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে শ্রদ্ধেয়, কেন্দ্রীয় ও পবিত্র। যে কোনো মানদন্ডের বিচারে আরবের হিজাজ অঞ্চলের উপত্যকায় অবস্থিত এই শহর পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত স্থান। খুবই যৌক্তিক কারণে সৌদি আরববাসীরা এই দুটি পবিত্র স্থানের সহজাত জিম্মাদার বা রক্ষক। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অনেক মুসলিম  ও অমুসলিম স্বেচ্ছাচারী শাসক ও শক্তি এই শহর দুটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেছে। আজকের দিনেও এই দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতানৈক্য বিদ্যমান।
প্রতিবছর সারা বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম উমরাহ ও ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য মক্কায় ছুটে যায়। সৌদি সরকার এই বিপুল সংখ্যক উমরাহ ও হজ্ব যাত্রীদের স্বাগত জানায় এবং তাদের অবস্থান ও চলাচলের জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। সারা বিশ্ব থেকে আগত সমুদ্রের মতো বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করা অত্যন্ত জটিল ব্যাপার কিন্তু সৌদি সরকার হজ্ব ও উমরাহ-র সহায়ক হিসেবে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করে আসছে। কিছু বিক্ষিপ্ত ও ক্ষুদ্র ঘটনা ও দুর্ঘটনা ছাড়া এই দুটি মসজিদের তত্ত্বাবধায়কের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হজ্ব ও উমরাহ বেশ শান্তিপূর্ণ ও কোনো বিশেষ উদ্বেগ ছাড়াই পালন করা সম্ভব হচ্ছে।
সমগ্র হজ্বের প্রক্রিয়াই মক্কা ও মদিনা বিশেষত কাবা শরীফকে ঘিরেই সংঘটিত হয়। মুসলমানেরা কাবা ও মসজিদে-এ- নববীতে তাদের হজ্বকালীন বেশীরভাগ সময় ব্যয় করে থাকেন। তাই, এই দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
সময়ের শুরু থেকেই বিশ্বভ্রমণকারীদের নিকট মক্কা আল্লাহর ঘর বা বাইতুল্লাহ শরীফের জন্য স্বীকৃত। এর পবিত্রতা ও প্রাচীনতা এমনকি ইতিহাসের থেকেও পুরোনো। এটি জানা আছে যে, আল্লাহ বেহেশতে অবস্থিত ঘর বায়তুল মা’মুর-এর আদলে কাবা তৈরী করার নির্দেশ দেন। নবী আদম (আঃ) সর্বপ্রথম এটির নির্মাণ কাজ করেন। তিনি পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব ছিলেন এবং এটি ছিল সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর।
কুরআন দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করে যে, ইব্রাহিম (আঃ) কাবার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কুরআন-এ বর্ণিত আছে যে, “ আল্লাহ সত্য বলেছেন, অতএব ইব্রাহিমের ধর্ম বিশ্বাস অনুসরণ করুন, যিনি নিখাদ বিশ্বাসের একজন মানুষ এবং মূর্তি উপাসক নন”। যখন নবী ইব্রাহিম মক্কায় এই পবিত্র স্থানটি নির্মাণ করেছিলেন তখন তাঁর প্রার্থণা ছিলো যে, এই স্থানটি সকল ভাল ও ধার্মিক মানুষের উপাসনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে থাকবে আর আল্লাহ তাঁর পরিবারের সদস্যগণকে এই পবিত্র স্থানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রাখবেন।
চিরায়তভাবে, ইব্রাহিম (আঃ) এর পুত্র ইসমাইল (আঃ) যিনি এই স্থানটির নির্মাণের জন্য তাঁর পিতাকে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর বংশধরেরাই এই পবিত্র স্থানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, আবদে মানাফের নামটি সামনে আসার আগ পর্যন্ত শত শত বছর ধরে কাবার তত্ত্বাবধায়ন ইসমাইলের পরিবারের মাঝেই ছিল। আবদে মানাফ উত্তরাধিকার সূত্রে এই তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বটি লাভ করেন। তার পুত্র হাশিম পরবর্তীতে এই নেতৃত্ব গ্রহণ করে এবং অন্যান্য  অনেক শহরে এটির প্রসার করেন। অসংখ্য তীর্থযাত্রী প্রতিবছর এই স্থানে জমায়েত হতেন এবং হাশিমের আতিথেয়তা উপভোগ করতেন।
নবী ইব্রাহিম এই ঘরটি একমাত্র প্রভু, আল্লাহ-র নিবিড় উপাসনার জন্য তৈরি করেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশাতেই লোকেরা তাঁর আদেশ অমান্য করে এবং কাবার ভেতর মূর্তি স্থাপন করা শুরু করে। প্রায় চার হাজার বছর পরে, সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) মক্কা বিজয় করে বিজয়ীর বেশে কাবায় প্রবেশ করেন এবং নিজ হাতে কাবার ভেতরে থাকা সবগুলো মূর্তি ধ্বংস করেন। এসময় তিনি কুরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করেন, “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে।”
ইব্রাহিমের পরে, কুসাইয়ের সময়ে এটিকে পুনঃনির্মাণ ও সুরক্ষিত করা হয়। মহানবী (সঃ) এর আমল ঘোষণা করার আগে, তাঁর জীবনের প্রারম্ভিক সময়ে বন্যার দ্বারা কাবা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো এবং এটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য অনেক কাঠামোগত উন্নয়ন এবং নির্মাণ কাজ পরেও করা হয় এবং তা এখনও চলমান।
এটি কাবা এবং সেসকল ব্যক্তিদের ইতিহাস যারা এটির সুরক্ষা করেছে এবং শয়তানী ও খারাপ শক্তির হাত থেকে ইতিহাসের প্রাকলগ্ন থেকে এটিকে তত্ত্বাবধায়ন ও রক্ষা করে আসছে। মুহাম্মদ (সঃ) এবং তাঁর  পরিবারের লোকজন কাবার রক্ষাকর্তা ছিলেন এবং বর্তমানে নবীর সরাসরি বংশধরদের মধ্যে ১২তম ইমাম কাবার প্রকৃত রক্ষক, এর তত্ত্বাবধায়ক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং সে হিসেবে তিনি গুপ্ত থাকবেন।
কাবার তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্ব এখনও শায়বাদের পুত্র এবং তাদের বংশধরেরাই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে আসছে। এটি মক্কা বিজয়ের পর মহানবী (সঃ)-এর প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহ্য। তিনি নগরীর চাবি উসমান ইবনে আবি তালহার হাতে ন্যস্ত করেন এবং কাবার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এককভাবে এবং চিরায়তভাবে শায়বাদের পুত্রদের দান করেন। মহানবী (সঃ)-এর এ ব্যাপারে বাণী ছিল, “ ওহে বনি তালহা, পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত চিরতরে এটি গ্রহণ করুন এবং এটি আপনার কাছ থেকে নেয়া হবে না যদি না কোন অবিবেচক, নিপীড়নকারী, স্বৈরাচারী এমনটা না করে।”
নবী ইব্রাহিম ক্রমানুযায়ী কাবার তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্ব তাঁর পুত্র ইসমাইলকে দিয়েছিলেন যিনি তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে জারহাম গোত্রের লোকেরা এবং খুজাহ গোত্রের লোকেরা ইসমাইলের পুত্রদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই ঐতিহ্যকে কেড়ে নেয়। কিন্তু কুসাই ইবন কিলাব ইবন মুররাহ, যিনি মহানবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর তৃতীয় প্রপিতামহ এবং ইসমাইল (আঃ) এর বংশধর ছিলেন, তিনি এই দায়িত্বকে পুনরুদ্ধার করেন।
কাবার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বংশ পরস্পরায় প্রতিটি পরিবারের বড় ছেলের উপর বর্তাতো এবং এটি উসমান ইবন আবি তালহা- যিনি মহানবীর সময়ের ছিলেন- তার পর্যন্ত বর্তায়। যখন মহানবী (সঃ) মক্কায়  প্রবেশ করেন, এর লোকেরা তখন ইসলাম গ্রহণ করছিলো। কিন্তু উসমান লুকিয়ে ছিল। মহানবী (সঃ) তখন আলী ইবন আবি তালিব (রাঃ)-কে উসমানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেবার জন্য আদেশ দেন।
আলী উসমানকে খুঁজে বের করতে যান এবং চাবি চান। কিন্তু উসমান  তাকে সেটি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আলী তখন তার কাছ থেকে চাবিটি কেড়ে নেন। তারা দরজা খুলে দিলে মহানবী (সঃ) কাবায় প্রবেশ করেন এবং দুই রাকাত নামায আদায় করেন।
ঐ সময় নবীজীর চাচা আব্বাস ইবন আব্দ আল-মুত্তালিব সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং নবীজীর পরিবারেই চাবিটি রাখার জন্য অনুরোধ করেন। তখন জিবরাইল (আঃ) একটি আয়াত নিয়ে নেমে আসেন এবং কাবার ভেতরেই আয়াতটি নাযিল হয়। আয়াতটি ছিল, “প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ আপনাকে তাকে বিশ্বাস করতে নির্দেশ দেন যাকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন ………..”, যার মাধ্যমে শায়বা পরিবারকে চাবিটির রক্ষক হিসেবে ইঙ্গিত করা হয় এবং নিশ্চিত করা হয় যে, আল্লাহ এটিই ইচ্ছা করেন।
আয়াতটি নাযিল হওয়ামাত্র মহানবী (সঃ) আলিকে চাবিটি উসমান ইবন আবি তালহাকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। আলি তখন উসমানের কাছে ফিরে যান এবং চাবিটি তাকে ফিরিয়ে দিয়ে জোর করে চাবিটি নিয়ে নেবার জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করেন। এটি উসমানকে বিস্মিত করে এবং আলি তাকে ব্যাখ্যা করেন যে, উসমানের জন্য একটি আয়াত নাযিল হয়েছে এবং আল্লাহ নবীজীকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যার উপর বিশ্বাস ন্যস্ত হয়েছে তাকে ফিরিয়ে দিতে। কাবার অভিভাবকত্ব বানি শায়বাদের মাঝেই রয়ে যায়, যা তাদের পরিবারে বয়োজেষ্ঠ্যদের উপরে আজও বর্তায়।
শেখ আব্দুল কাদির বিন তাহা বিন আল-শাইবী চার বছর কাবার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন এবং তিনি বাদশাহ্ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের নির্দেশে কাবার তালা পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেন।
কাবা পরিষ্কারের উপলক্ষে প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল তাকে তালাটি রাজার পক্ষ থেকে হস্তান্তর করেন। তত্ত্বাবধায়কের কার্যক্রম এখন কাবার দরজা খোলা এবং বন্ধ করার মধ্যেই সীমিত। সৌদি আরবের রাজ পরিবার কয়েক দশক ধরেই কাবার জিম্মাদারের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
নবী ইব্রাহিম (আঃ) ও মহানবী (সঃ) -এর বাণী থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, কাবার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব তাঁদের উত্তরসুরী বা বৃহত্তর অর্থে কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে। মুসলমানদের জন্য এর বাইরে যাবার কোনোই সুযোগ নেই।
মদিনায় অবস্থিত মসজিদ-এ-নববীর ক্ষেত্রেও একই রকম অবস্থা দৃশ্যমান হয়। নবীজী (সঃ) নিজেই মদিনাবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন এবং তিনি তাঁর অনুসারীদের মদিনা থেকে কিছু কেনাকাটা করার উপদেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নবীজী (সঃ)  এই দুর্দিনে যখন খুব দরকার তখন যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল তাদেরকে সাহায্য করার ইচ্ছাই প্রকাশ করেছেন।
মক্কা ও মদিনা এই দুটি পবিত্র শহরের উপর সৌদি আরববাসীর দাবি কখনোই অস্বীকার করা যাবে না কারণ আল্লাহ পাক নিজেই তাদের দয়া করেছেন এবং মহানবী (সঃ) নিজে তাদের জন্য প্রার্থণা করেছেন। কিন্তু তাদেরকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে কারণ কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী এটি তাদের উপর একটি প্রদত্ত দায়িত্ব।
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু আরব দেশ মক্কা ও মদিনার যৌথ তত্ত্বাবধায়ন ও ব্যবস্থাপনা দাবি করছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে, এর ফলে আরও বড় বিরোধ সৃষ্টি হবে। কারণ, মক্কা-মদিনার যৌথ ব্যবস্থাপনা সৌদি আরবের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী হবে। আর সার্বভৌমত্ব জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী প্রতিটি রাষ্ট্রের অধিকার।
এমতাবস্থায় কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী মক্কা ও মদীনার তত্ত্বাবধায়ন নিয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর কোন বিশৃঙ্খলা বা বিতর্কে জড়ানো অনুচিত হবে। বরং এই দেশগুলোর প্রতি বছর লাখো তীর্থযাত্রীর জন্য হজ্ব ও উমরাহ পালন নিরাপদ, সহজ ও আরামদায়ক করার নিমিত্তে সৌদি সরকারকে এই দুই পবিত্র শহরের ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করা উচিৎ।
মুসলমান হিসেবে আমরা আশা করি যে, আমাদের ধর্মীয় চেতনার সর্বোচ্চ স্থানে থাকা এই দুটি পবিত্র শহরের মর্যাদা ও পবিত্রতা যেন সবসময় অক্ষুন্ন থাকে এবং সারা বিশ্বের মুসলিম জনগণ যেন নিরাপদে ও বাধাহীন ভাবে চিরদিন হজ্জ্ব ও উমরাহ পালনে সক্ষম হয়।
লেখক : প্রধান সম্পাদক, মোহাম্মদী নিউজ এজেন্সী (এমএন), ভাইস চেয়ারম্যান, ডেমোক্রেসী রিসার্চ সেন্টার (ডিআরসি)।

Similar Posts